তুহিন তৌহিদ: ইউক্রেনে যখন আগ্রাসন চালানো শুরু করে রুশ বাহিনী, তখন অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছিল- ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী কি সুদক্ষ রুশ বাহিনীর সামনে দাঁড়াতে পারবে? তারা কি নিজেদের হাতে রাখতে পারবে প্রধান প্রধান শহরগুলোর দখল?
অনেকে বলেছিলেন, হয়তো সপ্তাহের মধ্যেই পতন হতে পারে কিয়েভের!
কিন্তু ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের এক মাসের বেশি সময় পার হয়ে গেছে। গত মাসের ২৪ তারিখে হাজার হাজার রুশ সেনা ইউক্রেনের সীমানার ভেতরে প্রবেশ করেন। সেইসঙ্গে প্রবেশ করে সাজোয়া যান, ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমা।
ইউক্রেনের প্রায় সব শহরের দৃশ্য একেবারেই পাল্টে গেছে। প্রধান প্রধান সড়কে পড়ে আছে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের ধ্বংসাবশেষ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অনেক স্থাপনা। কিয়েভের প্রধান সড়কগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। লাখ লাখ মানুষ দেশ ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।
যুদ্ধ চলাকালে প্রাণহানির প্রকৃত সংখ্যা জানা কঠিন। কারণ, যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী পক্ষগুলো নিজেদের সুবিধা মতো হতাহতের সংখ্যা প্রকাশ করে। বোমা, ক্ষেপণাস্ত্র আর গোলাগুলির মধ্যে সাংবাদিকদের পক্ষে প্রকৃত সংখ্যা যাচাই করাটাও হয়ে পড়ে কঠিন।
রাশিয়ার আগ্রাসনের যেভাবে জবাব দিচ্ছে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী, তা অনেককেই বিস্মিত করতে পারে। এখনও দেশটির মূল শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে ইউক্রেনের হাতেই। এমনকি খারকিভ, মারিউপোল, খেরসনের মতো শহরগুলো রাশিয়ার সীমান্তের কাছে হওয়া সত্ত্বেও তা দখলে নিতে পারেনি রুশ বাহিনী।
ইউক্রেনের বাহিনীর এ প্রতিরোধে এগিয়ে আসছে পশ্চিমের অনেক দেশ। বেশ কয়েকটি দেশ ইউক্রেনকে সামরিক সহযোগিতা দেয়ার বিষয়েও আশ্বাস দিয়েছে। প্রকাশ্যে-গোপনে এসব সহযোগিতা অব্যহত রয়েছে। তবে পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটো সদস্য না হওয়ায় তারা ইউক্রেন থেকে দূরেই থাকছে।
পূর্ব ইউক্রেন সেনা সদস্য বাড়িয়েছে ন্যাটো। কার্যত তারা এ বার্তা দিচ্ছে যে, ন্যাটোভুক্ত কোনো দেশে যেনো আক্রমণে না আসে রাশিয়া। ইতোমধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ন্যাটোর অন্তর্ভূক্ত দেশগুলোর প্রতিটি ইঞ্চি সুরক্ষায় তারা অঙ্গীকারবদ্ধ।
এরইমধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে বেশ কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে দুই পক্ষে কোনো ঐক্যমত্য আসেনি। তবে যেটুকু হয়েছে, তা হলো- তারা বিভিন্ন শহরে যুদ্ধের মধ্যে আটকা বেসামরিক লোকজনকে সরিয়ে নিতে ‘মানবিক করিডোর’ স্থাপনে করায় সম্মতি। তারপরও ইউক্রেনের অনেক শহরে এখনো আটকা পড়ে আছেন হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ।
যুদ্ধের বয়স এক মাসেরও বেশি। এখন কোনদিকে যাচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধ- এমন একটি প্রশ্ন সবার সামনে আসছে? ইউক্রেনে হার দেখবে রাশিয়া; ফিরে যেতে হবে তাদের রিক্ত হাতে? নাকি কিয়েভের দখল নেবে তারা; অতঃপর তাদের অনুগত লোককে বসিয়ে পরোক্ষভাবে দেশটি শাসন করবে?
নাকি ইউক্রেন আরেকটি আফগানিস্তান হতে চলেছে? ক্ষমতা হারিয়ে ইউক্রেনের বাহিনী বিচ্ছিন্নভাবে ক্ষমতাসীন রাশিয়া সমর্থিত সরকারি বাহিনীর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাবে?
সব মিলিয়ে একটি কথা বলা যায়, খুব দ্রুতই শেষ হয়ে যাচ্ছে না ইউক্রেন যুদ্ধ। এ যুদ্ধ আরও কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস, এমনকি বছর ধরেও চলতে পারে।
যুদ্ধে পুতিনের হাজার হাজার সেনারা রাজধানী কিয়েভের পাশে অবস্থান করছেন; কিন্তু তারা শহরের ভেতরে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছেন না। সবকিছু এটাই ইঙ্গিত দেয় যে, ইউক্রেনের প্রতিরোধ অনেকটাই ঠেকিয়ে দিয়েছে রুশ অগ্রাভিযান। তবে বেশ কিছু অঞ্চল ইতোমধ্যে নিজেদের দখলে নিয়েছে রাশিয়া।
শনিবার আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেনে আগ্রাসনের জেরে বৈশ্বিত পর্যায়ে অনেকটাই একা হয়ে পড়েছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। রাশিয়ার ওপর যেসব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, তাতে চাপের মুখে রয়েছে মস্কো। সুযোগ পাচ্ছেন রাশিয়ার ভিন্ন মতাবলম্বীরা। তারা পুতিন সরকারকে আক্রমণ করতে ছাড়ছেন না।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে শনিবার বিবিসি জানায়, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলকে ‘স্বাধীন’ করাটা এখন রাশিয়ার লক্ষ্য। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এটা তাদের যুদ্ধকৌশলের পরিবর্তনের ইঙ্গিত। সেইসঙ্গে রাশিয়ার সুরও নমনীয় হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, ইউক্রেনে তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য পূর্ণ হয়েছে। তারা ইউক্রেনকে দুর্বল করতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু ইউক্রেন কতোটা দুর্বল হয়েছে, সেটা বুঝা কঠিন। কারণ, তাদের কাছে অস্ত্র আসছে- কখনো প্রকাশ্যে, কখনো গোপনে।
প্রসঙ্গত, ইউক্রেনে আগ্রাসনের সমর্থনে রুশ পার্লামেন্ট দুমায় যে ভোটাভুটি হয়েছিল, তাতে পার্লামেন্টের ৪৫০ আসনের মধ্যে ৩৫১টি ভোট পক্ষে পড়েছিল। সূএ:বাংলাদেশ জার্নাল